"স্বপন কেন গোপন রবে, সফল কেন হবে না
আমার স্বপন করব সফল, ব্যর্থ হতে দেবনা"
বাংলাদেশের দক্ষিন-পশ্চিম প্রান্তে বাগেরহাট খানজাহান আলী স্মৃতি বিজড়িত, বঙ্গোপসাগর তীরে, সুন্দরবন মুখরিত শরণখোলা থানায় এই মহা বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কলেজটির পূর্ব দিকে বঙ্গোপসাগরের শাখা, বলেশ্বর তীরে সুন্দরবন থেকে ৭ কিলোমিটার উত্তরে এবং সুন্দরবনের পশ্চিম থেকে ৬ কিলোমিটার পূর্বে উত্তরে মোরেলগঞ্জ থানা। এখানেই কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
মেট্টিক পাশ করে প্রফুল্ল চন্দ্র মহাবিদ্যালয়ের সাদা সাদা দালানগুলো হাতছানি দিয়ে ডাকছিল। ভর্তি হলাম, প্রথম ক্লাসে উপস্থিত হলাম। খাতাটি প্রথম বেঞ্চে রাখলাম। হঠাৎ করে দেখলাম খাতাটি ফিক মেরে ৩টি বেঞ্চের উপর রাখল। আমিও ঐ খাতাটি দরজা দিয়ে বাহিরে ফেলে দিলাম। হঠাৎ করে কান-পিঠ জড়িয়ে চড় মারল। আমিও সাহসীকতার সহিত কোমরের বেল্ট খুলে ৪/৫ টি বারি মারলাম। এক সময় ক্লাসের ছাত্রদের মধ্যস্ততায় আমার খাতাটি পাই। মনে মনে ভাবলাম এখানে আপন পায় দাঁড়াতে হবে; নতুবা পিছন ফিরে চলে যেতে হবে।শরণখোলা-মোড়েলগঞ্জ শিক্ষার হার খুব কম। ব্যয়বহুল পড়াশুনা করা দক্ষিণাঞ্চলের সাধারণ মানুষের কাছে একটি পর্বততুল্য সমস্যা। তাই শরণখোলা-মোড়েলগঞ্জ ছাত্রদের নিয়ে গড়লাম মোড়েলগঞ্জের-শরণখোলা ছাত্র সংসদ, তার প্রথম ফলশ্রুতিতে সিরাজ উদ্দিন মেমোরিয়াল কলেজ, মোড়েলগঞ্জ প্রতিষ্ঠিত হল।
আসা যাক শরণখোলা ডিগ্রি কলেজ প্রতিষ্ঠার সংক্ষিপ্ত কয়েকটি কথাঃ রাষ্ট্রপতি নিবার্চন পর পরই রাষ্ট্রপ্রধান প্রথম সফর শরণখোলার রায়েন্দা পাইলট হাই স্কুল ময়দানে। হাজারো শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী ও সর্বস্তরের মানুষের পক্ষ থেকে শরণখোলার একটি কলেজ প্রতিষ্ঠার দাবী। রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, আরম্ভ করেন, কলেজ হয়ে যাবে। এই কলেজ প্রতিষ্ঠায় যারা সহযোগিতা করলেন খোন্তাকাটা ইউনিয়নের মরহুম চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আবুল হাসেম তালুকদার, রায়েন্দা পাইলট হাই স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক মোল্লা আঃ আজিজ, খোন্তাকাটা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রশিদ উদ্দিন আহম্মেদ বাদশা মিয়া, সাউথখালী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম শায়শের আলী এবং মুক্তিযোদ্ধা আঃ কাদের হাওলাদার, মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম লাল, খোন্তাকাটা ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান খান মতিয়ার রহমান, রায়েন্দা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোল্লা ইসাহাক আলী সহ অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।কলেজ গঠনে মূখ্য ভূমিকা পালন করেছেন এবং আমাদের সর্বাঙ্গীন সহযোগিতা করেছেন আওয়ামীলীগ নেতা স্বর্গীয় শান্তিরঞ্জন দাস, চেয়ারম্যান রশিদ উদ্দিন আহম্মেদ বাদশা মিয়া, মরহুম আলহাজ্ব আবুল হাসেম হাওলাদার।
কলেজ প্রতিষ্ঠায় আমাকে যারা মনোবল দিয়ে বিভিন্ন পর্যায় সাহায্য করেছেন-সাবেক খুলনা জেলা ডেপুটি কমিশনার জনাব এন. এম. নুরুল ইসলাম, খুলনা বিভাগীয় ফরেষ্ট কর্মকর্তা মরহুম শাহ আলী ইমাম এবং বাগেরহাটের মহাকুমার প্রশাসক, এবিএম মোশারেফ হোসেন ও আব্দুল সামাদ মল্লিক। তৎকালীন শরণখোলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সি. ও (পিআইও) মোঃ মুসা, বাগেরহাটের এসডিপিও সাবেক আইজিপি আনোয়ারুল ইকবাল, সাবেক মহাকুমার প্রশাসক ও অবসর প্রাপ্ত অতিরিক্ত আইজিপি মোঃ আঃ ছত্তার এবং শরণখোলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জনাব আঃ গনি সহ অনেক সরকারী কর্মকর্তা। কলেজের অর্থ সংগ্রহের ব্যাপারে যারা দায়িত্ব পালন করেছেনে তাদের নাম না লিখলেই নয়। সুন্দরবনের প্রত্যেক ফরেস্ট ষ্টেশন থেকে মণ প্রতি কাঠের মূল্য ০৫ টাকা করে চাঁদা নেওয়া হয়েছে উক্ত ব্যাপারে মরহুম আলহাজ্ব মমিন উদ্দিন পঞ্চায়েত, নুরুল ইসলাম ক্যাশিয়ার, আমির হোসেন তালুকদার, মতিয়ার রহমান হাওলাদার, চান মিয়া আড়ৎদার, স্বর্গীয় বিনোদ বিহারী, ধানসাগর ফরেস্ট থেকে আদায় করেছেন-সাবেক মেম্বর জনাব ওয়ারেজ আলী হাওলাদার এবং রায়েন্দা আড়ৎ থেকে অর্থ সংগ্রহ করেছেন জনাব আঃ রশিদ তালুকদার (পিতা-আনতাজ উদ্দিন তালুকদার), ফজলুল হক তালুকদার।
কলেজটি প্রতিষ্ঠা লগ্নেই মত এবং পথের পার্থক্যের কারণে হাই স্কুলের একটি ঘরে কলেজ চলত। সেই কলেজে আগুন দেওয়া হয় কিন্তু সরকারী কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। শরণখোলা কলেজে ৬৬ শতকে ১২ কুরা সম্ভবত সাড়ে ৮.৫ একর। এই জমিটি আমি আমার জমি বিক্রি করে নগদ টাকায় ক্রয় করে দিয়েছি এবং কলেজটির চর্তুদিকে মৎস্য চাষের জন্য ৪০ ফুঁট চওড়া করে লেক কাটানো হয় এবং কলেজের পূব পাশ্বে একটি দিঘি খনন করা হয়। কলেজটিতে প্রথম অবস্থায় ৬০+৬০ হাত ২টি গোলের ঘর করা হয় এবং যথারীতি ক্লাশ আরম্ভ করা হয়। কলেজের কার্যক্রম ১৯৭৮ সালে মঞ্জুরী প্রাপ্ত হয় এবং ঐ বছরই পরীক্ষা কেন্দ্র করা হয়। অর্থ রক্ষা করার জন্য সোনালী ব্যাংকে একটি একাউন্ট করা হয়। সেই একাউন্ট অপারেটর করার দায়িত্ব সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার আওয়ামীলীগের একজন সক্রিয় ব্যক্তি বাবু শান্তিরঞ্জন দাসকে অপারেট করা হয় এবং কলেজের যাবতীয় খরচ মিটিংয়ের মাধ্যমে পাশ করে ভাউচার সহকারে হিসাব-নিকাশ নিরুপন করা হত। কলেজে আলী আহম্মদ মহোদয়কে অধ্যক্ষ করা হইল। কয়েকদিনের মধ্যেই তিনি চলে যান। তারপরে সিলেটের আবেদুর রহমান-কে অধ্যক্ষ করা হলো। তিনিও চলে যান। পরবর্তী সময় আলতাফ সাহেবকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ করা হলো। তৎকালীন যাদের অধ্যাপক রাখা হল- তারা অত্যন্ত পরিশ্রম ও কষ্টে কলেজকে উন্নত করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। আমি শ্রদ্ধাভরে তাদের কথা স্মরণ করি। কেউ কলেজে আছেন, কেউ অবসরে গিয়াছেন অবার কেউ মারাও গিয়াছেন।
পযার্য়ক্রমে কলেজ পরিচালনা পরিষদ অত্যন্ত বিবেচনা করে জনাব মোঃ নূরুল আলম ফকিরকে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দিয়েছেন। একথা না লিখলে বিবেকের কাছে ফাঁকি দেওয়া হবে। বর্তমান অধ্যক্ষ শরণখোলা ডিগ্রি কলেজকে এক নবরূপে রূপায়িত করেছেন। প্রত্যেকটি ডিপার্টমেন্ট যাহাতে সুন্দরভাবে পরিচালিত হয় তাহার জন্য শিক্ষার সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন। নতুনভাবে ছাত্রাবাস তৈরী করেছেন এবং কলেজের দক্ষিণ দিকে কলেজ সেমিপাকা ভবন, এই ভবনের পর নতুন করে অডিটিয়ামের কাজ শুরু হয়ে যাহার নাম দেওয়া হয়েছে ডাঃ মোজাম্মেল হোসেন অডিটরিয়াম (বতর্মান এম.পি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী) তিনি কলেজ আঙ্গিনায় একটি সুরম্য মসজিদ তৈরি করেছেন। মসজিদটিকে আরো বড় করে পাকা দালান এর কাজ দ্রুতগতীতে চলছে এবং সাইক্লোন সেল্টারটি সুন্দর করে সাজানো হয়েছে, সেখানে ক্লাস করা হয়। কলেজের উত্তর দিকে লম্বা পুরানো বিল্ডিংটি নতুন প্রাণদান করেছেন এবং শিক্ষকদের বসবাসের জন্য আবাসিক কোয়ার্টার এবং শিক্ষক নিবাস তৈরী করা হয়েছে। তৎকালীন শরণখোলা থানায় যে কয়টি হাই স্কুল ছিল এবং আর.কে.ডি এস বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষয়িত্রীসহ সকলের এই কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে যথেষ্ট অবদান রয়েছে। বিশেষ করে কলেজের অনুমোদনের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে সর্বদা যোগাযোগ এবং কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ছিলেন, আর.কে.ডি এস বালিকা বিদ্যালয়ের প্রাক্তন বি.এস.সি শিক্ষক বাঞ্ছারাম বাবু যার অবদান অবিস্মরণীয়। বন বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে সর্বদা যোগাযোগ রেখেছেন, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার জনাব আবজাল হোসাইন এবং মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ইউসুব আলী সিকদার। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে বাবু সংকর দাস এবং মরহুম আঃ রব কমান্ডার এবং দেলোয়ার কমান্ডারও তাদের অবদানের কথা না লিখলেও নয়।
বর্তমানে খুলনা বিভাগীয় জনতা ব্যাংকের জি.এম. শরণখোলা উপজেলার খাদা গ্রামনিবাসী মোস্তফা জালাল আহম্মদ ফিরোজ কলেজ মসজিদে ৭২,৬০০/- (বাহাত্তর হাজার ছয়শত) টাকা টাইলস প্রদান করেন এবং গ্রন্থাগারে এক লক্ষ টাকার বই পাবার সহযোগীতা ও সহানুভূতির কথা আমরা স্মরণ করি। বিজ্ঞানের যুগ, ইলেকট্রনিক যুগে কলেজকে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি দিয়ে আধুনিকিরণ করেছে। কলেজের ফার্ণিচারগুলি মেরামত সহ নতুন করে তৈরী করা হয়েছে। বর্তমান কলেজের পরিবেশ অত্যন্ত চমৎকার ও কলেজে রাজনৈতিক বা অন্য কোন দলাদলি নাই।
শরণখোলা কলেজ “It has come to stay, and it will stay forever”. স্বাধীনতার ঊষালগ্নে এই কলেজটি প্রতিষ্ঠিতি হয়েছে এই কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে মুক্তিযোদ্ধাদের রয়েছে বহু অবদান।
বন্ধু, তোমরা ছাড়া উদ্বেগ, সুতীক্ষ কর চিত,
বাংলার মাটি দুর্জয় ঘাঁটি, বুঝে নিক র্দুবৃত্ত
পরিশেষে দলমত, জাতী, ধর্ম নিবির্শেষে থাকল আমার আকুল আবেদন, আসুন আমরা শরণখোলা ডিগ্রি কলেজকে সুন্দর করি, উজ্জ্বল করি এবং ইহার জশ এবং সুনাম শরনখোলার ঘরে ঘরে পৌছেদি।
----------0---------